সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো ট্রাজেডির এক বছর পূর্ণ হলো। ২০২২ সালের ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারী বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন ফায়ার ফাইটারসহ ৫১ জন মারা যান। আহত হয়েছেন ২৩০ জনেরও অধিক মানুষ। ঘটনার ১ বছর পার হলেও এখনও সেই ভয়াবহতার আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর।
এখনও পর্যন্ত সেই দিনের ভয়াবহতায় আহত হওয়া বহু মানুষের যারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছেন তারা কাতরাচ্ছেন বিছানায়। যারা হারিয়েছেন প্রিযজনকে তাদের চোখের জল ঝরছে অনবিরত। সীতাকুণ্ডের জনসাধারণ এ আগে এত বড় ট্রাজেডির স্বীকার হয়নি কখনও। সেই দিনের বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহতা রূপ নিযেছিল যে, বিএম ডিপো থেকে আশ পাশের অন্তত ৪/৫ কিলোমিটার এলাকা কম্পিত হয়ে বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত, মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন ভবনের দরজা জানালার গ্লাস, এমনকি বিল্ডিং এর ফাটল ধরে।
৪ জুন রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুন লাগে। রাত পৌনে ১১ টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনার আগুন ছড়িয়ে পরে। আর এই কনটেইনার গুলোর মধ্যে একটিতে ছিলো রাসায়নিক পদার্থ । এই রাসায়নিক রাখা কনটেইনারে যখন আগুন লাগে তখনি বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ডিপোতে ছিলো কম্বোডিয়া থেকে আসা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি চালান। আর সেখান থেকে আগুন লেগে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরা ডিপোতে। এই আগুন এতো ভয়াবহতার কারণ হচ্ছে হাইডোজেন পার অক্সাইড। যার ফলে আগুন এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকের মতে কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে থাকতো তা হলো তারা বলতে পারতো কোথায় রাসায়নিক আর কোথায় কি। এরা মূলত কাজে গাফিলতির কারণে না দেখে না বুঝে যেখানে যা খুশি রেখে দিতো। আর তারা জানতো না কোন কনটেইনারে কি আসছে। তারা এটা হয়তো যাচাই না করেই রেখে দিতো। যার ফল এই বিস্ফোরণ। অথচ বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের করা মামলা তদন্তে কারও দায় পায়নি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ১০ মাস পর হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা আট মরদেহ নিতে কেউ আবেদন করেননি।
একই সঙ্গে পরিচয় শনাক্তের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও তাঁদের পরিচয় না মেলায়। গত ২০ এপ্রিল আদালতের অনুমতি নিয়ে নগরীর বাইশ মহল্লা কবরস্থানে মরদেহগুলো দাফন করেছে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ঘটনার এক বছর পার হলেও স্বজন হারাদের আর্তনাদ না থামলেও থেমে থাকেনি বিএম কন্টেইনার ডিপোর কার্যক্রম। ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যে পুরোদমে চালু হয়ে যায় ডিপোর কার্যক্রম।