জাতীয় নির্বাচনের আগে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এ ভাবনায় রয়েছে বিএনপি।সরকার পতন আন্দোলনে অনেক দূর এগিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়াটা কত লাভজনক তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে ভয়ও আছে। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে দলে কেউ কেউ প্রার্থী হয়ে গেলে বা সরকারী টোপ গিলে বসলে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে। কারণ বিএনপির ভয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের মতো নতুন কারো আবির্ভাবেরও আশঙ্কা করছেন হাইকমান্ড
আগামী জুনের মধ্যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিটি করপোরেশনগুলো হলো– গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা। মেয়াদ অনুযায়ী সবার আগে গাজীপুর সিটির নির্বাচন হবে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে পাঁচটির মধ্যে চারটি– গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং সিলেট সিটির নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে পাঁচ সিটির নির্বাচনে সবটাতেই মেয়র পদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।
অবশ্য এবার বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে না দলটি। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি তারা। তবে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন দুই নেতা। নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেননি তাঁরা। এখন দলের কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামীতে সিটি করপোরেশনসহ কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ মুহূর্তে সরকারের পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাঁরা এখন যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছেন। অন্য কিছু ভাবার সময় নেই বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির কোনো নেতা নির্বাচনে যাবেন না। আর যদি কেউ যানও, তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনগুলোতে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার মতো অনেক যোগ্য ও জনপ্রিয় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সাবেক মেয়র, মন্ত্রী-এমপি এবং বিগত নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের কেউ এবং অন্য কোনো নেতাও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন। একই সঙ্গে দলে কোণঠাসা হয়ে হতাশা ও ক্ষুব্ধ নেতাদের কেউ কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন– এমন আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র মতে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে নিতে নানা প্রলোভনের আশ্বাসও দিতে পারে সরকার। যাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের দেখানো ভুল পথে বিএনপির কেউ কেউ পা বাড়াতেও পারেন। নতুন ‘উকিল’ আবির্ভাবের শঙ্কায় রয়েছেন দলটির হাইকমান্ডও। দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে দলের ভেতর সরকারের নানামুখী তৎপরতা চলছে। সম্প্রতি সে ষড়যন্ত্রে পা দেওয়ায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য শওকত মাহমুদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দলের ভেতর অন্য যাঁরা ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম করতে চাচ্ছেন, তাঁদের সতর্ক করতেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে বিএনপির ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করেছে। দেশি-বিদেশিদের চাপের মুখে পর্দার আড়ালে বিএনপির কতিপয় বিপথগামী নেতাকে বিজয়ী করা বা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী করার চেষ্টা করবে।
আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী অনেকেই আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে খেলতে দেওয়া অর্থাৎ ‘ওয়াকওভার’ না দেওয়ার পক্ষে। তাঁদের মতে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা এবং সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় অনেক জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হয়ে কাজও করেছেন। আবার অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন। এভাবে অনেকে বিভিন্ন ‘জায়গায়’ ঢুকে গেছেন। তাঁদের বের করে আনাও কঠিন। আবার যাঁরা কারও সঙ্গে যাননি; তাঁদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে বিভক্তি।
এদিকে পাঁচ সিটির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সরকারী দলের নেতারা মাঠে নেমে পড়েছে। যার যার কর্মী সমর্থক নিয়ে নানা ইস্যুকে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। রমজানে তারা ইফতার পাটির আয়োজন করে নিজ নিজ কর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন। দলীয় রাজনীতিতেও তারা বেশ সক্রিয়। বিএনপি নির্বাচনে না এলে সরকার সিটির নির্বাচন উম্মুক্ত করে দিতে পারে। যাতে করে বিএনপি আগ্রহী প্রার্থীরা উৎসাহ পায় নির্বাচন করতে।