উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বলে প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সুনীল অর্থনীতির জন্য এ বাহিনীকে শক্তিশালী করতে এবং বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে কোস্ট গার্ড সদরদপ্তরে ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড’ এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের জন্যই সমুদ্রসীমা ও উপকূল রক্ষায় এ বাহিনী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সংসদে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় কোস্টগার্ড আইন পাসে উদ্যোগী হয়েছিল আওয়ামী লীগ। কোস্ট গার্ডকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কোস্ট গার্ডের কাজের প্রসংশা করে বলেন, “কোস্ট গার্ড বর্তমানে দেশের বিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জানমাল রক্ষা, চোরাচালান, মাদক ও মানবপাচার দমনের পাশাপাশি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে কোস্ট গার্ড মানুষের মাঝে নিরাপত্তা ও আস্থার বিশ্বস্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামরিক ও অসামরিক অতিথিরা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোস্ট গার্ডের নবনির্মিত স্টেশন লক্ষীপুরের দুটি ভবন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা, নাবিক এবং অসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য কোস্ট গার্ড পদক, প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড পদক, কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক ও প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড (সেবা) নামে চার ক্যাটাগরিতে পদক পরিয়ে দেন।
কোস্ট গার্ড প্রেসিডেন্ট পদক (পিসিজিএম) পেলেন যারা- কমান্ডার মোহাম্মদ মেসবাউল ইসলাম, কমান্ডার মো. জিয়াউল হক, লে. কমান্ডার মো. মামুনুর রহমান মুন, লে. মো. সাদিক হোসেন, লে. মো. নাজমুল ইসলাম, ফারুক আহম্মেদ, মো. হুমায়ুন খান, মো. আবদুল হাকিম, শুভজিৎ দাস ও শাহাজুল ইসলাম।
কোস্ট গার্ড পদক-সেবা (বিসিজিএমএস) পেলেন যারা- কমোডর মো. এনামুল হক, ক্যাপ্টেন মো. শহীদুল্লাহ আল ফারুক, কমান্ডার মুহাম্মদ নাজমুল হক, কমান্ডার এস এম নূর-ই-আলম, কমান্ডার এম সেলিম আখতার, মো. ওসমান গণি, মো. আল মামুন, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. ইলিয়াস রেজা খান ও এম শমসের আলী।
কোস্ট গার্ড প্রেসিডেন্ট পদক-সেবা (পিসিজিএমএস) পেলেন যারা- কমান্ডার মো. আবু বকর, কমান্ডার রিয়াজ শহীদ, সার্জন লে. কমান্ডার মো. ইমরান জুয়েল, মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, শাকিল আহমেদ, মো. রফিকুল আলম, এম নজরুল ইসলাম, মো. আবু এমরান সুজন, জিয়াউর রহমান ও মো. আবদুর রহিম মোল্লা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিভিন্ন সময়ে দেশের বিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের অবৈধ মালামাল জব্দ করেছে। চোরাচালান প্রতিরোধ অভিযানে কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯৭৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে।
মৎস্য সম্পদ রক্ষা- ১৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন অবৈধ জাল মৎস্য সম্পদ রক্ষায় জব্দ করা হয়েছে। ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ১২২ কেজি জাটকা, ৩৫৯ কোটি ২১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৫ মিটার কারেন্ট জাল, ৯২ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ১৩৯ মিটার অন্যান্য জাল, ২০ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৬ পিস বেহুন্দী/মশারি জাল, ২৯৩ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ২১৩ পিস চিংড়ি/ফাইসা পোনা জব্দ করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযানে কোস্ট গার্ড নিয়মিতভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে।
কোস্ট গার্ড বনজ সম্পদ রক্ষায় ৪৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ২১৩ ঘনফুট কাঠ উদ্ধার করেছে।
পরিবেশ রক্ষায় ৩ হাজার ৬০৮ কেজি হরিণের মাংস, ৩০৯টি হরিণের চামড়া, ১৩৯টি হরিণের মাথা, ৪২টি তক্ষক ও ৫ হাজার ২৮৯ জন চোরাকারবারীকে আটক করা হয়।
উদ্ধার অভিযানে ২ হাজার ১৭৪ জন অপহৃত জেলে/মৌওয়ালকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নৌ-পথে দুর্ঘটনায় কবলিত ১৯২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয় ও ৩৭২টি অপহৃত বা ভাসমান নৌকা উদ্ধার করা হয়। কোস্ট গার্ডের দায়িত্বাধীন এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাসহ ছোট বড় অনেক বোট ও জলযান মিয়ানমার ফেরত/হস্তান্তর করা হয়েছে
শেখ হাসিনা বলেন, কোস্ট গার্ডের প্রশিক্ষণের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে নজরদারি বাড়াতে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রণয়নের পাশাপাশি হোভারক্রাফটের মতো আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেটা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
এদিন সকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোস্ট গার্ড সদরদপ্তরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় সশস্ত্র সালামে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানান বাহিনীর সদস্যরা। পরে বিভিন্ন সময়ে বাহিনীতে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মনোনীত কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।