এ মুহূর্তের বাংলাদেশে একটায় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন কে পাচ্ছেন। প্রার্থীও আলোচনায় থিতু হয়ে গেছে। একজন সাবেক সচিব ড. মসিউর রহমান অন্যজন ড. অনুপম সেন। কে হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের। কাকে বেচে নেবেন তিনি। কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে।
এরই মধ্যে ডালপালা ছড়িয়েছে নানা গুঞ্জন। দুজন বরেণ্য ব্যক্তিকে ফোন দেওয়ার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে এলাকা বা সেক্টর (কর্মক্ষেত্র) উল্লেখ করেও আকার-ইঙ্গিত আসছে। প্রকৃতপক্ষে কে হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তা নির্ধারণ হবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তবে আজ আলোচনা কওে এগিয়ে রাখা হতে পারে। ঘোষণা নাও আসতে পারে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র।
সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা। ওই সভা থেকেই রাষ্ট্রপতি পদে মূলত দলটির মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। আর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন রাষ্ট্রপতি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে,মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন দলটির সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
আগামী ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে হিসাবে নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছে।
তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে ভোটগ্রহণ করা হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এখানে ভোটার খোদ সংসদ সদস্যরা। আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।’
যেহেতু জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তাই ধরে নেওয়া হয় তারা যাকেই এ পদে প্রার্থী করবে, সে প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে স্লোগান প্রতিবেদককের।
তারা বলছেন, ব্যাপারটি একান্তই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ারে। এটি আগাম কারো পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। তিনি যেটি ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী তাকে সহযোগিতা করেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে নানা সমীকরণ উঠে এসেছে। এসব আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আসছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। স্বচ্ছ রাজনীতিক, উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত শিরীন শারমিন বেশ দক্ষতার সঙ্গে সংসদ সামলাচ্ছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও স্পিকার পদ থেকে এনে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও চাউর হয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরে থেকেও অনেক বন্ধু রাষ্ট্র তাদের পছন্দের প্রার্থীর নামও যোগ করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে অনেকে বলছেন, সরাসরি রাজনীতি করে আসা ছাড়া কারও রাষ্ট্রপতি পদে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি হলেও দেশের যেকোনো সংকটে রাষ্ট্রপতিকেও শক্ত ভূমিকা রাখতে হয়। নজির আছে- সাবেক আমলা বা বিশিষ্টজনদের অনেকে এ পদে এসে সেই ভূমিকা রাখতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচনায় সর্বাগ্রে। তবে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ সারথী হিসেবে ওবায়দুল কাদের যেভাবে দল ও সরকারের কাজ নিরলসভাবে করছেন, তাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে দলীয় এবং সরকারি সেসব কাজে ব্যাঘাত বা ছন্দপতন হয় কি না, সে ভাবনা এখন সামনে আসছে। যে কারণে আলোচনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও আছেন।’ তবে শিরীন শারমিনের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে এমন নির্ভরযোগ্য স্পীকার আর পাওয়া যাবে ? তাছাড়া শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রপতি করা হলে নতুন একজন স্পীকার আবার তার ছেড়ে দেয়া সংসদের আসনে করতে হবে উপনির্বাচন। তাতেও ঝামেলা দেখছেন নীতিনিধারনী নেতারা। সে জন্যই সবচেয়ে নিরাপদ একজনকে বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আর্ন্তজাতিক সমাজ বিজ্ঞানি ড. অনুপম সেনকেও পছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে দলীয় ঘনিষ্টরা জানায়।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নামও আসছে আলোচনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামও অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘এটি একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা বা পছন্দের বিষয়। ওনার আস্থায় যিনি আছেন, তাকে তিনি ঠিক করবেন। উনি যেটি ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী সেভাবে সহযোগিতা করেন। সুতরাং এ ব্যাপার একান্তই ওনার এখতিয়ারে। এটি আগাম কারো পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই, ধারণাও নেই।