গাড়ি ভাঙচুর, ২৫ জন আহত, ২০ কর্মী আটক

পুলিশ-বিএনপির ব্যাপক সংঘর্ষে কাজির দেউড়ি রণক্ষেত্র

 নিজস্ব প্রতিবেদক |  সোমবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ |  ৭:২৯ অপরাহ্ণ
       

নগরের কাজির দেউড়ি এলাকায় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ফলে পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এ সময় পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বিকেলে কাজির দেউড়ি মোড়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি, কার মোটরসাইকেল, পুলিশ সার্ভিস সেন্টার এবং আশপাশের কয়েকটি দোকান। আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশের মোটরসাইকেলে। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপিকর্মীদের হামলায় একটি জাতীয় দৈনিকের প্রাইভেট কারসহ একাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ২০ বিএনপিকর্মীকে আটক করে পুলিশ।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। কাজির দেউড়ি নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে বেলা আড়াইটা থেকে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ৩টার দিকে কাজির দেউড়ি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিএনপি-যুবদলের নেতকার্মীরা সমাবেশে যাওয়ার পথে সংঘর্ষের সূত্রপাত। তারা আরও জানায়, এ সময় নাসিমন ভবন হয়ে কাজির দেউড়ি মোড় থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করেন বিএনপির কর্মীরা। একপর্যায়ে পুলিশের বহনকারী একটি গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় পুলিশ। পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কাজির দেউড়ি মোড়ের এক নম্বর ও দুই নম্বর গলিতে অবস্থান নেয় বিএনপিকর্মীরা। ছত্রভঙ্গ হয়ে আরেকটি গ্রুপ চলে যায় কাজির দেউড়ি সংলগ্ন শিশুপার্ক হয়ে সিআরবি ও লালখান বাজারের দিকে। লালখান বাজারের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাওয়ার পথে পুলিশবাহী একটি গাড়িতে হামলা করে। এ সময় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কাজির দেউড়ি মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুরের পর একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুুলিশের ধাওয়ায় বিএনপিকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ার পর কাজির দেউড়ি মোড় থেকে লাঠিসোটা হাতে জামালখানের দিকে চলে যায়। এ সময় আসকারদিঘীর পাড় এলাকায় ফের ইটপাটকেল ছোড়েন বিএনপিকর্মীরা। প্রতিউত্তরে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষ শেষে মোটরসাইকেলে লাগানো আগুন নিভিয়ে ফেলে পুলিশ।


শুধু গাড়ি নয়, পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাজির দেউড়ি মোড় এলাকার কয়েকটি দোকান। টাইলস মার্কেটের একটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপিকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলে পাশের হোটেলে একজনের মাথা ফেটে গেছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বিএনপিকর্মীদের হামলায় গাড়ি ভাঙচুরের শিকার বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিকেলে নাসিমন ভবনের সামনে বিএনপির মিছিল-সমাবেশ ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আমরা গাড়ি নিয়ে লাভলেন হয়ে সিআরবির দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদল বিএনপিকর্মী আমাদের গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। আমরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসি। আমাদের সামনেই দুটি গাড়ি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে ওরা। ওই গাড়িতে থাকা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির হায়দার বলেন, লাভলেন থেকে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে সিআরবির দিকে যাচ্ছিলাম আমরা। হঠাৎ বিএনপির একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। আমরা সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার শিকার হই। ওরা গাড়িতে পাথর ও ইট মেরে কাচ ভাঙচুর করে। আমরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পেছনে ফিরে আসি। যে বড় বড় পাথর ওরা মারছিল, কাচ ভেঙে একটা ভেতরে ঢুকলে আমরা শেষ হয়ে যেতাম।’


এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি মিছিল থেকে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপির কর্মীরা। পুলিশ শুধু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছে। হামলায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান, ট্রাফিক পুলিশের টিআই বিপ্লব সরকারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রথমদিকে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। কিন্তু বিএনপির কিছু কর্মী কাজির দেউড়ি মোড়ে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তাদের হামলায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।