সরকার বিরোধী আন্দোলনের সুযোগে আবারও বিএনপির ঘাড়ে উঠে যাচ্ছে জামায়াত ইসলামী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জামাতকে বিএনপি দূরে রাখলেও সুযোগ বুঝে দলটি আবারও বিএনপির ছায়ায় আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। যদিও বিএনপির একটি বড় অংশের অপছন্দ এ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ইসলামী দলটি। তবু কার ঈশারায় জামায়াত আস্কারা পাচ্ছে তা নিয়ে কেউ কেউ মুখ খুলতে চেয়েও খুলতে পারছে না। তবে বর্তমান সরকারকে হঠাতে হেফাজতসহ অন্যন্যা ইসলামী ও ডানপন্থী দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে আনতে চাচ্ছে বিএনপি। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রেখে চলছে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিচ্ছে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রথম ধাপের যবনিকা টেনেছে বিএনপি। গত শনিবার ঢাকার গণসমাবেশ থেকে এসেছে নতুন কর্মস‚চি। ১০ দফা সামনে রেখে আগামী ২৪ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগরে গণমিছিল নিয়ে নবউদ্যমে রাস্তায় নামবেন নেতাকর্মী। এবার আর বিএনপি একা নয়; পাশে পাচ্ছে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীসহ ৩৫ দলকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের যুগপৎ আন্দোলনের স‚চনা করতে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি।
এরই মধ্যে দলটির দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী একই দিন কর্মস‚চি ঘোষণা করেছে। ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো একইভাবে বিএনপির কর্মস‚চিকে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরামের একাংশসহ আরও বেশ কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের জন্য দ্রæততম সময়ের মধ্যে সব দলকে নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়াও থাকবেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। এর বাইরে অন্য দলের নেতারাও থাকবেন। এই লিয়াজোঁ কমিটিই দেবে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মস‚চি; করবেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। এ ছাড়া মিডিয়া সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেলসহ বেশ কয়েকটি সেল থাকবে এই কমিটির অধীনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, কমরেড সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, ড. রেজা কিবরিয়া ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রয়েছে।
২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো হলো- কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন বিএলডিপি, ড. ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ জাতীয় দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাগপা, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, মাইনরিটি পার্টি, জাগপা (অপরাংশ) রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ২০ দলীয় জোট থেকে এক সময় বেরিয়ে যাওয়া ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পাথ’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।
গত শনিবার বিএনপির কর্মস‚চি ঘোষণার দিনে জামায়াতেরও একই কর্মস‚চি ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই দিন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ভার্চুয়ালি দলের ১০ দফা ঘোষণা করে আন্দোলনের কর্মস‚চি ঘোষণা করেন। বিএনপির ১০ দফার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি, দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া, নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো কয়েকটি দাবি যোগ করা হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, তত্ত¡াবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনসহ বাকি দাবিগুলোয় বিএনপির সঙ্গে পুরোপুরি মিল রাখা হয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির সঙ্গে জোট করায় দীর্ঘদিন ধরে চাপে রয়েছে বিএনপি। এ পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো সম্পর্ক রাখেনি দলটি। এমনকি ২০-দলীয় জোটের ব্যানারে কোনো কর্মস‚চিও পালন করা হয়নি। সঙ্গে রাখা-না রাখা নিয়ে প্রায়ই তিক্ততার সৃষ্টি হলেও প্রকাশ্যে জোট ভাঙেনি কোনো পক্ষই। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কার্যক্রমে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও, জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কেউ মুখ খোলেনি। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে একই দিন অভিন্ন কর্মস‚চি ঘোষণা করায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক আবারও সামনে চলে আসে।
জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়টি সব সময় অস্বীকার করেছে বিএনপি। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারাই শরিক হবেন, তাদেরই সাধুবাদ জানানো হবে।
বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জামায়াতের কর্মস‚চি ঘোষণায় খুব বেশি সমস্যা মনে করছেন না গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাঁরা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াতকে নিয়ে কর্মস‚চি পালনের কথা তাঁরা কখনও বলেননি। তবে জামায়াত যদি তাদের ঘোষিত কর্মস‚চির মতো কর্মস‚চি নেয় তাহলে তো নিষেধ করা যাবে না। এটা তাদের দলীয় ব্যাপার। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক বিষয়ে তাঁরা বলেন, এটাও বিএনপির একান্ত বিষয়।
জামায়াত ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে তাঁরা সাধুবাদ জানাবেন। জামায়াতও যদি দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে তাদের মতো করে রাজপথে থাকে, তাতে তিনি দোষের কিছু দেখছেন না।
হেফাজত ঘনিষ্ঠ দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি নেতারা বেশি যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।