সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের মাতা অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগমকে এডভোকেট ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগমসহ পাঁচ নারীর হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী, সাবেক স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ও বর্তমানে এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর বিশিষ্ট আইনজ্ঞ অধ্যাপক ও কলামিস্ট এডভোকেট কামরুন নাহারের সুনাম আইন আদালত ও মানবাধিকার অঙ্গনে সর্বজনবিদিত। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও মানসিক শক্তিত্বে বলিয়ান তিনি।
যশ-খ্যাতি, সম্মান সবই আছে তাঁর। ৮ সন্তানের সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ঋদ্ধ, প্রতিষ্ঠিত। স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বড় ছেলে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। উচ্চশিক্ষিত মেজো ছেলে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মৎস্যখামারি। তৃতীয় ছেলে শিপিং ব্যবসায়ী। ৪র্থ ছেলে বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত। কনিষ্ঠ ছেলে আন্তর্জাতিক পর্যটন ব্যবসায়ী। তিন কন্যার একজন চিকিৎসক, মেজ মেয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত এবং ছোট মেয়ে এলএল.এম করে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বার-এটল তে অধ্যয়নরত। রত্নগর্ভা বলতে যা বোঝায়, সত্যিকার অর্থে সবগুলো গুণ তারমধ্যে বিদ্ধমান।
পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি পদুয়া ডিগ্রী কলেজে বেশ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৮ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ঘরে বসে আয়েশি কিংবা ঘুরে বেড়িয়ে বিলাসী জীবন-যাপনের অবারিত দ্বার তাঁর সামনে। কিন্তু বৈষয়িক, জাগতিক এসব প্রাপ্তি, ভালো থাকা তাঁর খুব বেশি পছন্দ নয়। গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদান কিংবা মানবতা লঙ্ঘনের জায়গায় প্রতিবাদী ঝান্ডা হাতে লড়াই করার রক্ত যার শরীরে, দীক্ষা-শিক্ষা যে জীবনে; সে জীবনের কাছে লাভ-অলাভ, বিলাসব্যসন সবই তুচ্ছ, নস্যি। তিনি প্রশান্তি ও আত্মতৃপ্তি খুঁজে ফিরেন আর্তপীড়িতের সেবায়, নারীর ক্ষমতায়নে।
২০০৯ সালে তিনি বিভাগীয় স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর দায়িত্ব পান। পরে জজ কোর্টের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও নিয়োগ পান। পটিয়া থানাধীন খানমোহন গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবার নাম মোহাম্মদ আবদুল মালেক, মায়ের নাম রাবেয়া খানম। তিনি রাঙ্গুনিয়ার কৃতিসন্তান খ্যাতিমান আইনজীবী, ও আইন অঙ্গনের পুরোধা পুরুষ, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও দু’বারের জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর মরহুম আলহাজ্ব নুরুচ্ছফা তালুকদারের সহধর্মিণী। স্বামীর উৎসাহেই আইন পেশায় আসেন তিনি।
প্যারালাইসিসের মতো রোগও তাঁকে কাবু করতে পারেনি। ১৭ বছর আগেই হারিয়েছেন চলৎশক্তি। হাঁটেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যায়। কিন্তু এসব কিছুই এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে দমাতে পারেনি। ঝড়-তুফান, বৃষ্টিবাদল যাই আসুক- প্রতিদিন তিনি নির্দিষ্ট সময়ে ছুটে যান আদালতে। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প শোনেন চেম্বারে বসে। জুনিয়রদের ইন্সট্রাকশন দিয়ে সাধ্যমত সমস্যাসঙ্কুল মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কখনো কখনো বিচারকের কক্ষে নিজেই ছুটেন গাউন পরে। ‘তাঁর রচিত ‘নারী, মানবাধিকার ও বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপট’, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ এবং ‘আমার দেখা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ এবং এশিয়া ও ইউরোপের ১৩ টি দেশ’ বই ৩টি পড়লেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতা অনুভব করা যায়। মানবাধিকার কর্মকান্ডে বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি একাধিক পদক এবং সম্মাননাও লাভ করেন। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, নারী উন্নয়ন ও মানবাধিকারমূলক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। তিনি নারী অধিকার এবং সমাজে নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন এবং বিভিন্ন সময়ে টিভি- রেডিওতে নারী নির্যাতন এবং নারীদের অধিকার ও নারীসুরক্ষা সম্পর্কে আইনগত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি হিউম্যান রাইটস কমিশন চট্টগ্রাম ডিভিশনের প্রাক্তন ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা ইসলামী পাঠাগারের সদস্য, লেডিস ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম রোজ গার্ডেনের পি.পি,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রামের সভাপতি।