বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পার্বত্য বান্দরবনের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অবাধে দেশে প্রবেশ করছে গরু-মহিষ। বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষংছড়ি উপজেলার জন প্রতিনিধিসহ ২০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডকেট সক্রিয়ভাবে এসব পাচার কাজ করছেন। তারা সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে অবৈধভাবে চোরাই পথে মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ নিয়ে আসছে। উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে গরু-মহিষ আটক করলেও থামছে না পাচারকারীদের তৎপরতা। অটককৃত গরু-মহিষ প্রশাসন নিলাম দিলেও কম মুল্যে তা ক্রয় করে কিনে নিচ্ছেন পাচারকারী সিন্ডিকেট।
জানা যায়, বিগত আট মাস ধরে স্থানীয় একটি চক্র মিয়ামনার থেকে আলীকদম ও নাইক্ষংছড়ির একটি চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে গরু ও মহিষ পাচার করে আসছে। আর এই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলীকদমের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের বুচিঢং থেকে এসব গরু ও মহিষ আলীকদম ও নাইক্ষংছড়িতে প্রবেশ করছে। এ রাজ্যের বকুলি এলাকার বাসিন্দা সৌমেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে গরু ও মহিষ ক্রয় করে থাকেন আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসস্টেশন এলাকার দানু সিকদার পাড়ার বাসিন্দা লালু প্রকাশ বার্মাইয়া লালু এবং ৪ নম্বর কুরুপ পাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতফুং । এরা দুইজন স্থানীয় চক্রের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে কক্সবাজার থেকে হুন্ডির মাধ্যেমে ওই টাকাগুলো মিয়ানমারে সৌমেনের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সৌমেন গরু-মহিষের চালান একে একে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের বুচিঢং বকুলি সীমান্ত পার করে আলীকদমের বড় আগগালা ও বড় বেতী দিয়ে আলীকদম সদরে নিয়ে আসে।
আলীকদমের স্থানীয় চক্র বিএনপি নেতা ইউনুছ মিয়া, যুবলীগ নেতা সফি আলম, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান কফিল উদ্দীন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা, ইউপি সদস্য আলী হোসেন, মো. হারুন, সালাউদ্দীন, রুহুল আমিন, মো. ইলিয়াস, নজরুল ইসলাম, জামাল সওদাগর, ছোট ইউনুছ, মো. ফরিদ, মোস্তফা জামাল রাশেদ ও মারুফ গরু-মহিষের চালান গুলো গ্রহণ করেন। পরে গরু-মহিষগুলো গভীর রাতে ট্রাকযোগে আলীকদম-চকরিয়া, লামা-সরই –কিয়াজুপাড়া সড়ক পথে কক্সবাজার, আমিরাবাদ, কেরানীহাট চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে।
তারা আরও জানায়, স্বল্প মূল্যে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করায় একদিকে ক্ষতির মুখে পড়ছে স্থানীয় খামারিরা, অন্যদিকে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা অবিলম্বে গরু পাচার বন্ধ এবং পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজা সরোয়ার বলেন, গরু-মহিষ পাচাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন সব সময় সতর্ক রয়েছে। গত সাপ্তাহে ২০টি গরু আটক করা হয়েছে। এগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিলাম দিয়ে রাজস্ব আদায় ও করা হয়েছে। তিনি বলেন স্থানীয় চক্র যারা গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। গরু চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রহণ করা হবে বলে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় অবৈধ চোরাচালান নির্মূল করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গরু-মহিষ পাচারের কথা স্বীকার করে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন অলীকদম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের উপার থেকে গরু-মহিষ দেশে প্রবেশ করছে। কিছু চোরাকারবারী এসব পাচার কাজে জড়িত বলে জেনেছি। তবে চোরাচালান বন্দে প্রশাসনিক তৎপতা জোরদার রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সীমান্তে পাচার রোধে বিশেষ সতর্ক রয়েছে। গত সেপ্টেমর মাসে উপজেলা প্রশাসন বিশাল একটি গরুর চালান আটক করে । পরে গুলো টেন্ডারের মাধ্যমে নিরাম দিয়ে প্রায় কোটি টাকার উপরে সরকার রাজস্ব আয় করেছে। তিনি বলেন চোরাচালান বন্ধ করা গেলে দেশীয় গরুর খামারিরা ন্যায্য মুল্য পাবে।
ইমা