পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে লংমার্চে হামলার ঘটনার নেপথ্যে প্রধনামন্ত্রী শেহবাজ শরীফসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অন্য দুজন হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সাল।
ইমরানের দাবি, এ তিনজনই তাকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন।
হামলার ঘটনা নিয়ে রোববার (৬ নভেম্বর) লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমরান একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই যদি তদন্তের নেতৃত্ব দেয় তাহলে বিচার বিভাগীয় কমিশন কী করবে? আমার প্রথম কথা হলো- বিচার বিভাগীয় কমিশন কী করবে যেখানে আমি যাদের নাম বলেছি তারাই তদন্তের প্রধান হবেন? তিনি হামলার ঘটনায় একটি স্বচ্ছ তদন্ত চান। কারণ, এখানে একটি ‘সম্পূর্ণ প্যাটার্ন’ রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনা কর্মকর্তা ফয়সালের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
ইমরান আরও বলেন, পাঞ্জাবের কর্তৃপক্ষ হামলার বিষয়ে মামলা নিতে অস্বীকার করছে। তাদের ভাষ্য, মামলা থেকে সেনা কর্মকর্তা ফয়সালের নাম সরিয়ে নিতে হবে। তিন দিন হয়ে গেছে পাঞ্জাব সরকার তথা জোট সরকারের কারণে আমি মামলা নথিভুক্ত করতে পারিনি। তারা বলে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে। কিন্তু ফয়সালের বিরুদ্ধে নয়!
পিটিআই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমার পুরোপুরি বিশ্বাস এই তিনজনই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হামলা ঘটিয়েছে। মামলা নথিভুক্ত করা আমার অধিকার। আমি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আমি যদি মামলায় তার (সেনা কর্মকর্তা ফয়সাল) নাম না দিতে পারি; আমার প্রশ্ন- জাতি ও সাধারণ মানুষের জন্য কেমন অধিকার আশা করা যায়?
এদিকে, ইমরানের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পিটিআই’র চেয়ারম্যান অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। বিশেষ করে একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পেশাদার এবং সুশৃঙ্খল সংগঠন। আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর ভিত্তিহীন অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক ও তীব্র নিন্দনীয়। কাউকে দায়মুক্তিসহ প্রতিষ্ঠান বা সেনাদের মানহানি করতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, ইমরানের তোলা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে তিনি প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালকে ফুল কোর্ট কমিশন গঠনের অনুরোধ করেছেন।
হামলার ঘটনায় অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো বিবৃতি দেননি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ওয়াজিরাবাদের একই পয়েন্ট থেকে আবারও লং-মার্চ শুরুর ঘোষণা দেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আমি ও অন্য ১১ জন সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম, যেখানে মোয়াজ্জামকে শহীদ করা হয়েছিল- সেখান থেকেই আবার আমাদের মার্চ শুরু হবে।
তিনি বলেন, আমি লাহোর থেকে মার্চের ভাষণ দেব। আমাদের লং-মার্চের গতির ওপর নির্ভর করে আগামী ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রাওয়ালপিন্ডি পৌঁছবো।
মার্চটি রাওয়ালপিন্ডিতে পৌঁছলে তিনি নিজেও এতে যোগ দিয়ে কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চের সপ্তম দিন ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনিসহ আহত হন ৭ জন। একজনের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলে। হামলাকারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমরান দুয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার নেতাকর্মীরা।
সূত্র: জিও নিউজ ও ডন
ইউডি