আর দশটি গেরস্ত কুলবধুর মত নাহিদার সুন্দর সাজানো সংসার। স্বামী, তিন ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসারে একদিন অভাব ছিল না। অভাব এলো আস্তে আস্তে। সংসারের উন্নতি করার আশা নিয়ে নাহিদা আক্তার ও তার স্বামী ইকবাল হোসেন ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করেন একটি এনজিও সংস্থা থেকে। প্রথমদিকে ঋণের কিস্তি দিয়ে তেমন বেগ পেতে হয়নি। স্বামী নিয়মিত অটোরিকশা চালাচ্ছেন। আয় রোজগার মোটামুটি ভাল। প্রতি সপ্তাহে এদিক ওদিক করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বছর দুয়েক থেকে ঋণের বোঝায় নাহিদার দিন কেবল ভারী হতে শুরু করে। স্বামী অটোরিকশা আর চালাচ্ছেন না। পরিশোধের যে পরিকল্পনায় নাহিদা ঋণ নিয়েছিলেন সে আশায় যেন বালি পড়ল।
এক ঋণের কিস্তি শোধ করতে গিয়ে নাহিদা বিভিন্ন ব্যক্তি- প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরো ঋণ নেয়া শুরু করেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায়- প্রতি সপ্তাহে নাহিদাকে চার হাজার টাকা ঋণ কিস্তির ঘানি টানতে হচ্ছে। কিস্তির জন্য এনজিও কর্মী ও পাওনাদাররা প্রায় প্রতিদিন তার ঘরে আসেন। স্বামীকে না পেয়ে তারা নাহিদাকে তাকে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিতেন।
একদিকে সংসারের ঘানি অন্যদিকে ঋণের কিস্তির হয়রানি। এই জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে অবশেষে বিষপানে আত্মহত্যা করলেন নাহিদা আক্তার (৩৮)।
মর্মান্তিক এমন ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের কেদার খিল গ্রামে।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকাল আটটার দিকে বিষ পান করলে গুরুতর আহত নাহিদা আক্তারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে একই দিন দিবাগত রাত বারোটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নাহিদা আক্তার সৈয়দপুর ইউনিয়নের কেদার খিল গ্রামের নুর বক্স হাজী বাড়ির ইকবাল হোসেনের স্ত্রী। তিনি তিন ছেলের জননী ছিলেন। ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর।
নাহিদার ভাই সায়েদ হোসেন বলেন, আমার বোনের স্বামী ঋণগ্রস্ত ছিলেন ঠিকই। তবে কি কারণে আমার বোন বিষ খেয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না। তাদের সংসারে অশান্তির খবর শোনা যাচ্ছিল।
ইউডি