মাছ ধরার ‘চাই’, কেবল স্মৃতি হয়ে যায়

 উজ্জ্বল দত্ত |  মঙ্গলবার, নভেম্বর ১, ২০২২ |  ৬:৫৫ অপরাহ্ণ
       

বর্ষার বৃষ্টিতে বদ্বীপ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বেশির ভাগ অঞ্চল জলপ্লাবিত হয়ে যায় । আবার শরত শেষে শীতের আগমনী সময়ে প্লাবিত খাল-বিল, নদ-নদী,পুকুর-জলাশয়গুলো শুকাতে শুরু করে। আর তখন সেই পানি কমে যাওয়া খাল বিলগুলোতে মাছ-ভাতের বাঙালিরা মেতে উঠে মাছ শিকারে। মাছ শিকারের উপকরণ হিসেবে এদেশে হাজার বছর ধরে হরেক রকমের জাল,পলো, টেঁডা, বড়শা, বড়শি, ফালা, ফাঁদসহ নানান কৌশল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এসব উপকরণের সাথে লোকজ বাঙ্গালি জীবনে মাছ ধরার ‘চাই’  এখনো জনপ্রিয়। এটি বাঁশের তৈরি মাছ ধরার এক ধরণের ফাঁদ।

আর এই ‘চাই’য়ের জন্য বিখ্যাত কুমিল্লা। চট্টগ্রামের তৈরি ‘চাই’ও বেশ জনপ্রিয় এবং শৈল্পিক। তবে বর্তমান সময়ে এই ঐতিহ্যগত উপকরণটি চট্টগ্রামের হাতে গোণা কয়েকটি জায়গায় তৈরি হয় মাত্র । কালের বিবর্তনে ঘর গেরস্তের মাছ শিকার ও উপার্জনের এই বস্তুটি বলা যায় জাদুঘরে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, হাটহাজারী, চন্দনাইশ,পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া,লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, চকরিয়া,মহেশখালী অঞ্চলে এখনো তৈরি করা হয় মাছ ধরার ‘চাই’। এসব অঞ্চলের কৃষি ও মৎসজীবীদের অনেকেই বংশ পরম্পরার এই সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন। মৌসুমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের হাট-বাজারে বিক্রি করা হয় ‘চাই’।

চন্দনাইশ ধামাইর হাটে ‘চাই’ বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ মাঈনুদ্দিন আলী বলেন, আমার বাড়ি সাতবাড়িয়া। সংসারের অন্য কাজ কর্মের ফাঁকে অবসরে আমি বাঁশের কাজ করি। লাই,ভাইর,পল, ফেউন্যা, কুলা,চালইন, চাই, ডুলাসহ নানা জিনিসপত্র আমি বানাতে পারি। চাই’য়ের মধ্যে কয়েক ধরণের স্টাইল আছে। কোনটার নাম আনতা,কোনটার নাম চাই আবার কোনটার নাম ঘরচাই (এটা দেখতে ঘরের কামড়ার মত চতুস্কোণ আকার)। একটা চাই বানাতে সপ্তাহ খানেক লাগে। তবে সময় দিলে তিনচারদিনের মধ্যেও বানানো যায়। মাছের সাইজ ছোট মাঝারি বা বড় বিবেচনা করে একেক স্টাইলের চাই বানানো হয়। একটা চাইয়ের দাম ২০০ টাকা/৪০০ টাকার মধ্যে। বাঁশের দাম বেশি। এখন আগের মত চাই কেনার লোক নেই। এখন বেশির ভাগ মানুষ কেনা মাছ খায়। এই হাটে হয়ত চাই বা লাই ভাইর কিনতে এসেছেন হাতে গোণা দুয়েকজন।

তবে কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো ‘চাই’ তৈরি হয় এবং কুমিল্লা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। সারাদেশে কুমিল্লার চাই’য়ের সুনাম বহুকাল আগের। কুমিল্লা জেলার অন্তত ২৫টি হাট-বাজরে বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার ফাঁদ চাই।

জেলার চান্দিনা, তিতাস, মুরাদনগর, মেঘনা উপজেলার হাটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বসে চাইয়ের হাট। সপ্তাহে দুইদিন করে হাট বসে।

তাছাড়া দেশের সিলেট,ঝালকাঠি,নওগাঁ,বগুড়া,ফরিদপুরসহ অনেক জেলাতেও মাছ ধরার চাই তৈরি ও বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্ষার শেষ সময় থেকে চাইসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির মৌসুম শুরু হয়। কারণ পানি কমার সঙ্গে-সঙ্গে নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করে। ওই সময় চাই গুলো পানি প্রবাহের মুখ- যেমন জমির আল, খানা-খন্দের পাড় কেটে তৈরি করা পানির রাস্তায় বিশেষ কাদায় পুঁতে রাখতে হয়। তখন পুঁতে রাখা চাইয়ে ছোট,মাঝারি বিভিন্ন আকারের মাছ আটকে যায়। ৩ ঘন্টা থেকে ৫ ঘন্টা পর চাই পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

ইউডি