রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ

লামায় মসজিদের জায়গা দখলের চেষ্টা করছেন খোদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক !

 লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি |  শনিবার, অক্টোবর ৮, ২০২২ |  ৫:০৩ অপরাহ্ণ
       

যে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন -এমনটিই হওয়ার কথা। কিন্তু সেই কমিটির খোদ নেতৃবৃন্দ যখন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ দখলের চেষ্টা করবেন, তখন সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখ ও উদ্বেগজনক। এমন অভিযোগ উঠেছে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটিরি সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

দানসূত্রে পাওয়া মসজিদের ২০ বছরের দখলীয় ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গায় রাতের আধাঁরে ঘর নির্মাণ করে এখন নিজের বলে দাবী করছেন তিনি। জায়গা দখলের ঘটনাটি নিয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখনি ঘটনার বিষয়ে প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে, এটিকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে পীরে কামেল হযরত শাহ মাওলানা গোলাম রসুল কমরী ইউনিয়নের রহমত খোলা এলাকায় মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এলাকাবাসীর দেয়া চাঁদা ও মুষ্টি চাউলে রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের খরচ মেটানো হত। এরপরও এলাকার মানুষ গরবী বলে মসজিদের খরচ চালাতে সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় আবদুল আজিজ নামের এক ব্যক্তি ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গা মসজিদকে দান করেন। এই জায়গার উপর কয়েক দফা একাশি ও আকাশমনি সহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছে চারা রোপন করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটি। মাস দুয়েক আগে ওই জায়গা থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করে কিছু টাকা মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। বাকী টাকা এখনো মসজিদের ফান্ডে জমা রয়েছে। এখন অভিযোগ উঠেছে, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লোভের বশিভূত হয়ে গত ৫-৬দিন আগে আবদুল আজিজ কর্তৃক দানকৃত জায়গাটির উপর রাতের আঁধারে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে জায়গাটি তার বলে দাবী করেন। জমি দাতা আব্দুল আজিজ বলেন, মসজিদের খরচ যোগাতে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়লে ২০ বছর আগে আমার ভোগদখলীয় ৪০ শতক জায়গা দান করি। এখন দেখছি রফিকুল ইসলাম তার বলে দাবী করছে।

স্থানীয় লম্বাখোলা এলাকার সর্দ্দার মো. কামাল উদ্দিন, গোয়ালমারা পাড়ার মো. কামরুজ্জামান, লম্বাখোলা গ্রামের আব্দুল মন্নান ও বারেক হোসেন সহ অনেকে এক সূরে জানায়, সেক্রেটারী রফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালে রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দখলীয় কিছু জায়গা তার বাবা আব্দুর রশিদের দাবী করে বিক্রি করে দেন। তার বিরুদ্ধে মসজিদের অর্থ আত্মাসাতের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধা হয়নি। সেক্রেটারীর অর্থ আত্মসাতের বিচার না হওয়ায় কয়েক গ্রামের লোকজন মসজিদের সাপ্তাহিক মুষ্টি চাল দেয়াও বন্ধ করে দেন। হেফজখানা ও এতিমখানায় আগে মাসিক ৬শ টাকা দিয়ে ছাত্ররা কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করত, এখন ১ হাজার ৫শত টাকা নিচ্ছে বর্তমান কমিটির লোকজন। এতে করে গরীব শিশুরা পড়ালেখা করতে পারছেনা এবং দিনে দিনে ছাত্র কমে যাচ্ছে। তাই মসজিদের জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা সহ জবর দখলকারী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবীও জানান তারা। তারা আরও জানান, জন্ম থেকে আমরা এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। আব্দুল আজিজ দান করার পর গত ২০ বছর ধরে ওই জায়গা মসজিদ ভোগ করে আসছে। এখন ওই জায়গা কিভাবে রফিকুল ইসলামের হয়। এ কমিটির অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আজ দ্বীনি এই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এদিকে রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শামসুল আলম তাবলীগে থাকায় কথা হয় ছেলে নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলেও কমিটির আরও কিছু লোকজন মিলে সুবিধা ভোগ করায় কেউ কিছু বলছেনা। মসজিদের জায়গা নামজারি করার কথা বলে অনেক টাকা নিয়েছে সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। কিন্তু এখনো জায়গা গুলো মসজিদের নামে নামজারি করেনি।

এই বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি যেখানে টিনের ঘর তুলেছি, সেখান থেকে উত্তরে সাড়ে ৪ একর জায়গা বন্ধোবস্তি মূলে আমার। আর আমার ঘরের দক্ষিণের খালি জায়গাটি (সেলিমের রাবার বাগান পর্যন্ত) রহমতখোলা বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের। আমি মসজিদের জায়গায় ঘর তুলিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস কোম্পানী বলেন, কমিিিটর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কর্তৃক মসজিদের জাযগা দখল চেষ্টার ঘটনা শুনেছি। কমিটির সভাপতি মো. শামসুল আলম তাবলীগে থাকার কারণে আপাতত দুইপক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। সভাপতি তাবলীগ থেকে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে বসা হবে।

ইমা