দুয়ারে ঢাকের শব্দ

চারিদিকে চলছে দুর্গোৎসবের আয়োজন ব্যস্ততা

 উজ্জ্বল দত্ত |  রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ |  ৯:৫৮ অপরাহ্ণ
       

অক্টোবরের প্রথম দিন ষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসবকে ঘিরে চারদিকে চলছে নানা আয়োজন। পূজাকে ঘিরে সর্বশ্রেণির সনাতনীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী-পুরুষরা ব্যস্ত নতুন কাপরচোপড় কেনাকাটায়। বাজনেওয়ালারা ব্যস্ত ঢাক-ঢোলসহ পূজার আরতিতে ব্যবহৃত যন্ত্রের টিউনিংয়ে। কারিগর সম্প্রদায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রতিমা তৈরি নিয়ে। আয়োজক মহল ব্যস্ত পূজার বাহারি আয়োজন নিয়ে। ভিন্ন ভিন্ন মন্ডপে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের প্রতিমা। প্রতিমার স্থাপনশিল্প, মন্ডপের ডিজাইন, আলোকায়ন,অলংকরণ,বাদ্যবাজনা, শব্দযোজনাসহ দুর্গোৎসব মানে এক মহাযজ্ঞ।

শুধু সনাতনীরাই দুর্গোৎসব নিয়ে ব্যস্ত তাই নয়। পূজার আয়োজনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল ধর্মীয় শ্রেণিপেশার মানুষেরই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দূর্গাকে পৃথিবীতে আহবান করা হয়েছে। রোববার বিকালে নগরীর টেরীবাজার,রেয়াজুদ্দিন বাজার,নিউমার্কেট, প্রবর্তক , বহদ্দারহাট এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড়। মার্কেটগুলো প্রতিটি বিপনী কেন্দ্রে নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো ঘুরে ঘুরে সেরে নিচ্ছেন পূজার কেনাকাটা। প্রতি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। ক্রেতা সামলাতে বিক্রেতারাও বেসামাল। আবার ক্রেতা সমাগমের কারণে বিভিন্ন মার্কেট সংশ্লিষ্ট সড়কে যানজট ছিল লক্ষ্য করার মত।

টেরীবাজারে পূজার কেনাকাটা করতে আসা বিমলা রানী ঘোষ স্লোগান নিউজকে বলেন, ছেলে মেয়েদের জন্য জামা কাপড় কেনা হয়ে গেছে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আর আমার বাবা-মা’র জন্য কাপড়চোপড় কিনব। মেয়ের জন্য কিছু প্রসাধনী কিনব। তাই শপিংয়ে এসেছি।

এদিকে, সদরঘাট কালী মন্দিরে প্রতিমা কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকগুলো প্রতিমা সারিবদ্ধ ভাবে রাখা আছে। প্রতি প্রতিমায় এখন চলছে রূপায়নের কাজ। কারিগরদের এখন কথা বলার সময় নেই। কোন প্রতিমায় সাদা রংয়ের প্রলেপ দিচ্ছেন কারিগররা। আবার কোন কোন প্রতিমায় লাল, হলুদ,নীল,সবুজ, বেগুনীসহ নানা রঙের আঁচড় পড়ছে। রঙতুলির আঁচড়ে প্রতিটি প্রতিমা হয়ে উঠছে প্রাণবন্ত। দেবতার মৃন্ময় রূপ চিরে প্রকাশিত হচ্ছে নিরাকার ঈশ্বরের চিন্ময় রূপ। প্রতিমায় আপাত রঙের কাজগুলো করে যাচ্ছেন সহকারী কারিগররা। আর প্রতিমার চোখ,মুখমন্ডলের স্পর্শকাতর অঙ্গের রূপায়ন করছেন হেড কারিগররা।

সদরঘাট কালী মন্দিরে প্রতিমায় সাদা রং করছেন কারিগর আশীষ পাল জানান,  গত দুই মাস ধরে কোন ঘুম নেই বলতে গেলে। আমার সহকারীদেরও একই অবস্থা। প্রতিমা গড়া একটি শিল্প। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম,চেষ্টায় একজন কারিগর শিল্পী হয়ে উঠেন। আমি ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে প্রতিমা গড়ছি। এখন আমার ছোট ভাইও আমার সাথে রয়েছেন। শুধু কারখানা নয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্ডপেও আমাদের কাজ চলছে। গত তিনমাস আগে থেকেই প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, আয়োজকরা ক্যাটালগ দেখে কারখানায় এসে আমাদেরকে অর্ডার করেন। ক্যাটালগ অনুযায়ী প্রতিমার মূল্য নির্ধারিত। এখান থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় আমাদের বানানো প্রতিমা পাঠানো হবে। ১ অক্টোবরের আগেই আমাদেরকে সকল প্রতিমা আয়োজকদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

কারিগররা জানান, মূলত প্রতি বছর রথযাত্রার পর থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন তারা। বিভিন্ন ধরনের প্রতিমার ক্যাটালগ দেখে আয়োজকরা তাদের বায়না করেন। সেই অনুযায়ী চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে হয়। মহিষাসুর, সিংহসহ সবার বাহনও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই সেগুলোকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। আর এসব মিলিয়েই পরিপূর্ণ হয় একটি প্রতিমা। এই পুরো কাজটি কোনো একক কারিগরের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাঠামোতে বেনা বাঁধা, প্রতিমার চোখ, হাতের আঙুল, মুখমণ্ডল তৈরিসহ প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন কারিগর থাকেন। এই একটি প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ করতে ৫/৬ জন কারিগরের সময় লাগে অন্তত ১৫ দিন।

আবার পূজাকে ঘিরে বাজনাওয়ালাদেরও কাটছে ব্যস্ত সময়। নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্যান্ডপার্টির দোকানগুলোতে যন্ত্রশিল্পীরা শেষবারের মত শান দিয়ে যাচ্ছেন যন্ত্রে। কোন দোকান ভেসে আসছে ট্রাম্পেটের সুর। কোন দোকানে বাজছে বাংলা ঢোলের মোহময় তাল। আবার কোন দোকানে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন মিলে ঢাক ঠিক করে নিচ্ছেন।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

স্লোগান